ভ্রমন

আমাজন নদীতে সেতু না বানানোর কারণ কি

আমাজন নদীতে সেতু না থাকার কারণ! বন্ধুরা আমরা সকলেই আমাজন বনের কথা শুনেছি। যাকে পৃথিবীর ফুসফুস বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আমাজন নদীতে সেতু না থাকার কারণ

কিন্তু একটি প্রশ্ন সবার মনে বারবার ঘুরপাক খায়। সেটি হল এত বড় মিঠা পানির ভান্ডার আমাজন বনের উপর দিয়ে কেন এখনো কোন রাস্তা বা চলাচলের জন্য সেতু তৈরি করা হয়নি। বন্ধুরা আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে আমরা জানবো কেন আজও পর্যন্ত আমাজন বনে রাস্তা বা সেতু তৈরি সম্ভব হয়নি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক আজকের পোস্টটি।

৬,৯২০ কিলোমিটার দীর্ঘ আমাজন

পৃথিবীর দ্বিতীয় লম্বা নদী আমাজনে কি কি আছে। আয়তনের দিক থেকে অন্য যেকোনো নদীর চেয়ে এই নদীটিতে বেশি মিঠা পানি রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রজাতির ডলফিনের থাকার জায়গা এই নদী। এখানে আরো রয়েছে ১০০ প্রজাতির বৈদ্যুতিক মাছ, ৬০ প্রজাতির পিরান হা। আছে আরো অনেক কিছুই। নেই শুধু সেতু। আমাজন নদীতে সেতু নেই এটা কেমন কথা। মানুষ যেখানে সাগরে সেতু বানিয়ে ফেলেছে সেখানে একটি নদী কিভাবে কিভাবে ছার পেল। পেরুর কলম্বিয়া এবং ব্রাজিলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৬,৯২০ কিলোমিটার দীর্ঘ আমাজনের বেসিনে ৩১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বসবাস। তাহলে তারা প্রয়োজনে নদীটি পার হয় কিভাবে। ব্রাজিল সরকার নদীটির ওপর কোন ব্রিজ তৈরি করে নি কেন? বিস্তীর্ণ জলাভূমি এবং গভীর আর পুরুষ আন্ডার গ্রোথ সহ একটি রেইন ফরেস্টে সেতু আর প্রয়োজনীয় প্রধান পথ ঘাট নির্মাণে কোন অসুবিধা রয়েছে?

আমাজনে সেতু না বানানোর কারণ

আসলে আমাজনে দুই তিরে খুব কম মানুষ থাকে। তাই নদীটির দুই তীরে সেরকম কোনো পথঘাট গড়ে ওঠেনি যা জুড়ে দেওয়ার জন্য সেতু বানাতে হবে। নদীর তীরে যে কয়েকটি শহর আছে সেখানে নৌকা আর ফেরিতে করেই নদী পারাপার আর পণ্য আনা নেওয়া করা হয়। সেখানে সেতু বানানো হলে এসব কাজ একটু দ্রুত হওয়া ছাড়া আর কোন লাভ নেই।

আমাজনের বেসিন খুবই দুর্গম। সেতু তৈরির জন্য আরো বেশি দুর্গম। সেখানে সেতু তৈরি করতে গেলে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক বাধা আছে শেষ সবে জয় করা কঠিন। রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজন শক্ত মাটির আর সেতু বানাতে হলে আরও বেশি প্রয়োজন হবে শক্ত মাটির। যে মাটি সেতু আর ভারি সব পিলারের ভর সহ্য করতে পারবে। বিস্তৃত জলাভূমি আর এই নরম মাটিকে সেই পরিমাণ শক্ত করে তোলা প্রচন্ড ব্যয় হবে। এছাড়া নদীটির বিভিন্ন স্থানে পানির গভীরতা এক এক জায়গায় একেক রকম।

ঋতুর পরিবর্তনে নদীর নাভ্যতার পরিবর্তন অনেক স্থানেই আমরা দেখি। কিন্তু আমাজনের বেলায় এই পার্থক্য আকাশ পাতাল। আজ যেখানে পলিজমে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে গভীর পানিময় স্থান হয়ে উঠতে। পারে ফলে নদীর তীরে কোথা থেকে সেতু আরম্ভ হয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হবে সেই সিদ্ধান্তে আশা কঠিন। যদি সেতু তৈরীর পর দুইপার পানির নিচেই চলে যায় তাহলে তা হবে অর্থের বিশাল অপচয়।

আমাজন পৃথিবীর ফুসফুস

পৃথিবীর প্রতিদিনের চাহিদার ২০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাজন পৃথিবীর ফুসফুসের খ্যাতি পেয়েছে। বাংলাদেশের মতো ৩৫ টি দেশ আমাজনের ভিতর রাখা যাবে। আমাজন নদীর বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি দূর করে এর উপর যদি সেতু বানানো হয় তাহলে এই নদী আর বন দুটোকেই গলা টিপে মেরে ফেলা হবে।

ব্রাজিলের এত বড় বনের দরকার নেই

 ২০১৯ সালে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেরি বর্ষণারো তার রিও ব্যাংক প্রকল্পের অংশ হিসেবে আমাজন জুড়ে একটি সেতু তৈরীর কথা বলেছিলেন। তার বিভিন্ন সময়ের কার্যকলাপ পুরোপুরি আমাজন বিরোধী। রেইন ফরেস্টের কাঠ কেটে সাফ করার কে উৎসাহিত করেছেন তিনি। দাবানলে বনটি ধ্বংস হওয়ার সময় তার বক্তব্য ছিল, ব্রাজিলের এত বড় বনের দরকার নেই। ভবিষ্যতে কখনো অ্যামাজনের বুক চিরে সেতু তৈরি হলে তা নতুন মানব বসতি, বোন উজারকারী এবং চোরা শিকারীদের অবাধ চলাচলের রাস্তা করে দিবে। ধ্বংস হবে সেখানকার ইকোসিস্টেম আর জীব বৈচিত্র।

বন্ধুরা পৃথিবীর ফুসফুস খেত আমাজন বনের উপর সেতু নির্মাণের পক্ষে আপনার বক্তব্য আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। এরকম আরো বিশ্বনন্দিত বন সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইটটি ফলো করুন ধন্যবাদ।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।