লাইফস্টাইল

ইলন মাক্সের কোটিপতি হওয়ার পেছনের গল্প

ইলন মাক্সের সফলতার গল্প

ইলন মাক্সের সফলতার গল্প! মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের তৈরি কম্পিউটার গেম বিক্রি করে ৫০০ ডলার আয়। এরপর মাত্র ২৭ বছর বয়সে কোটিপতি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করে কালক্রমে বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া। হ্যাঁ বন্ধুরা আপনারা ঠিকই ধরেছেন বলা হচ্ছে ইলন মাক্সের কথা।

পাতাল থেকে অন্তরীক্ষ মহাকাশ থেকে টানেল স্যাটেলাইট থেকে সোশ্যাল মিডিয়াস সবকিছুতেই আছে তার পদচারণা। অদ্ভুত আচরণ ও কর্মকাণ্ডের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে বিশ্বের এই শীর্ষ ধনী। তবে এই গল্পগুলোর আড়ালে অনেকটাই চাপা পড়ে যায় ইলন মাক্সের জীবন সংগ্রামের আসল কাহিনী।

ইলন মাক্সের শৈশব জীবন

শৈশবে অসুখী ছিলেন ইলন মাক্স। স্কুলে হতেন বুলিংয়ের শিকার। দক্ষিণ আফ্রিকার পিউটোরিয়ায় ১৯৭১ সালের ২৮ জুন জন্ম নেয় ইলন মাক্স। পিতা ইরল মাক্স ছিলেন প্রকৌশলী ও মাইনিং কোম্পানির মালিক। মা মেই মাক্স করতেন মডেলিং। বয়স যখন মাত্র আট তখন বিচ্ছেদ হয় মাক্সের পিতা-মাতার।

তবে ব্যবসায় ব্যস্ত বাবা সময় দিতে পারতেন খুবই কম। তার উপরে ছিল কঠোর শাসন। স্কুল জীবনেও খুব একটা আনন্দে ছিল না মাক্স।  কিছুটা লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় নিয়মিত সেখানে বুলিং এর শিকার হতেন। একবার তো সিঁড়ি থেকেই ফেলে দেওয়া হয় তাকে। ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। তাই ১৭ বছর বয়সে প্রথম সুযোগেই জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে কানাডায় তারপর যুক্তরাষ্ট্রের পারি জমান তিনি।

ইলন মাক্সের মিলিনিয়ার হওয়ার গল্প

১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা স্টানফোড বিশ্ববিদ্যালয় PHD কোর্সে ভর্তির সুযোগ পান ইলন মাক্স। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিজের জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন ইলন মাক্স।

যা তাকে পরিবর্তিত করেছেন আজকের ইলন মাক্সে। স্টানফোডে মাত্র দুইদিন ক্লাস করেই পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শুরু করেন নিজের প্রথম স্টাট আপ জিপ ২। নিজের ছোট ভাই ও একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে জিভ টু শুরু করেছিলেন মাক্স। ঐ সময় পত্রিকা গুলোকে অনলাইন সিটি গাইড সফটওয়্যার সুবিধা দিত জিপ ২।

মাত্র চার বছরের মাথায় ৩৪০ মিলিয়ন ডলারে জিপ ২কে বিক্রি করেন তিনি। কোম্পানির ৭ শতাংশের মালিকানা হিসেবে তার পকেটে আসে ২২ মিলিয়ন ডলার। এভাবে মাত্র ২৭ বছর বয়সে মাল্টিমিলিওনের পরিণত হন ইলন মাক্স। পেপালের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি।এই পেপালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাক্স।সেই হিসেবে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের জনক হিসেবেও বিবেচনা করা ইলন মাক্সকে।

জিপ ২ বিক্রির পর ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এক্স ডট কম। যাকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম প্রথম অনলাইন ব্যাংক। ২০০০ সালে সিলিকন ভ্যালি কর্তৃক একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলিত হয়ে এই এক্স ডট কম রূপান্তরিত হয় পেপালে। ২০০২ সালে যাকে দেড়শ কোটি ডলারে কিনে নেন ই-কমার্স জায়ান্ট ইবে।

আর ইলন মাক্সের পকেটে ঢুকে 180 মিলিয়ন ডলার। পেপাল বিক্রি থেকে পাওয়া বিপুল অর্থ ইলন মাক্সে কাজে লাগালেন দুইটি আলাদা উদ্যোগে। তৈরি করলেন মহাকাশ পর্যটন সংস্থা স্পেস এক্স। আর বিনিয়োগ করলেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলায়। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে যা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাণ

অনেকের মতেই যা ছিল আসলে পাগলামি। ঐ সময়ের বিবেচনায় বৈদ্যুতিক গাড়ি ছিল অদূর ভবিষ্যতের বিষয়। আর মহাকাশ পর্যটন ছিল রীতিমতো কল্পনার বিজ্ঞান। কিন্তু আইজ্যাকের মতো বড় হওয়া ইলন মাক্স তখন ব্যস্ত বাস্তবে পরিণত হওয়ায় কাজে। অনেকেই বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলার জনক হিসেবে মনে করেন ইলন মাক্সেকে।

কিন্তু আসলে টেসলার প্রতিষ্ঠাতা নন তিনি। অনেকটা উড়ে এসেই সেখানে জুড়ে বসেছেন তিনি। সরিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা দেরি। টেসলার মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মার্টিন এভার্ট এবং মার্টিন টার পেইন। সেখানে বিনিয়োগকারী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ইলন মাক্স ।প্রথমে কোম্পানির বোর্ড অফ দিরেক্টর ও ২০০৪ সালে কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদ নিজের আয়ত্তে নেন ইলন মাক্স। এরপর ২০০৭ সালে টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এভার্টকে উৎখাত করে নিজেই বনে যান প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্বের তৎকালীন শীর্ষ ধনী এমাজনের জেফবেজস্কে অতিক্রম করে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তকমা অর্জন করেন ইলন মাক্স। সে সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর খুব দ্রুতই বাড়তে থাকে ইলন মাক্সের সম্পদ।একই বছরের নভেম্বরে মিলন মাক্সের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টাকা কামানো তকমা পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টাকা খওয়ানোর রেকর্ডও কিন্তু ইলোন মাক্সের।

২০২১ সালের নভেম্বরে ৩৪০ বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিলেন তিনি আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে এত বেশি সম্পদের মালিক হতে পারেননি মার্ক ছাড়া আর কেউই। তবে এরপরই শুরু হয় পতন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তার সম্পদ নেমে আসে মাত্র ১৩৭ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ মাত্র ১৩ মাসে ২০০ বিলিয়নেরও বেশি সম্পদ হারান তিনি।

বিশ্বে ইতিহাসে এত বেশি পরিমাণ সম্পদ খোয়াননি আর কোন ব্যক্তি। মূলত সে সময় টেসলার শেয়ারের দামের পতনের কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ ইলন মাক্সের সম্পদের অন্যতম প্রধান উৎস টেসলায় থাকা তার শেয়ার। বিশ্বের সবচেয়ে দামি অটোমোবাইল কোম্পানি টেসলার ১৩% শেয়ারের মালিক ইলন মাক্স। খুব ছোটবেলা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার লক্ষণ চোখে পড়ে ইলন মাক্সের।

১২ বছর বয়সে কম্পিউটার গেম তৈরি

টউটরিয়া শহরে শৈশবে ইলন মাক্স তার ভাইকে সঙ্গে করে ঘরে ঘরে ঘুরে বিক্রি করতেন চকলেট। প্রযুক্তিবিদ হিসেবেও তার প্রতিভার প্রকাশ ঘটে বাল্যকালেই। মাত্র ১২ বছর বয়সেই কম্পিউটার গেমস বানিয়ে তা বিক্রি করে ৫০০ ডলার উপার্জন করেছিলেন ইলন মাক্স।

যুক্তরাষ্ট্রের পেন্সিলভিনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেটিকে নাইট ক্লাবে পরিণত করেন ইলন মাক্সে। অবশ্য ইলন মাক্সের দাবি সে সময় তার মাথার উপর ঝুল ছিল এক লাখ ডলারের শিক্ষা ঋণের বোঝা। এজন্য তার প্রয়োজন ছিল টাকার সে সময় ফেসবুকের একটি স্যাটেলাইট বহনকারী স্পেস এক্স এর রকেট বিস্ফোরিত হয়। এতে ইলন মাক্সের বিরুদ্ধে খোব প্রকাশ করেছিলেন জাকারবাগ। ২০১৭ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে ইলন মাক্সের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

আর এই দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ লাভ করে যখন খবর বের হয় টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বীপ মাইক্রো ব্লগিং সাইট তৈরির পরিকল্পনা করছেন জাকারবাগ। সর্বশেষ সত্যি টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থ্রেটের উন্মোচন করে মেটা। একরখা এই বিশ্ব বাণিজ্যে আর কি কি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে ইলন মাক্সের জন্য সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।